গতকাল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ‘ধূমপানের ফলে দেহের ব্যথা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা ধূমপান করেন এমনকি আগে ধূমপান করতেন কিন্তু এখন ছেড়ে দিয়েছেন, তারা অধূমপায়ীদের চেয়ে বেশী শারীরিক যন্ত্রণায় ভোগেন। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য ওঠে এসেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বিবিসি’র একটি অনলাইন জরিপে অংশ নেয়া মানুষের তথ্য উপাত্ত দিয়ে তৈরী করা হয়েছে গবেষণা বা সমীক্ষাটি।

সাম্প্রতিককালে এদেশের বিপুল সংখ্যক বয়স্ক মানুষকে গায়ের ব্যথায় ভুগতে দেখা যায়। আর ব্যথাকে পুঁজি করে দেশ জুড়ে হাজারো ধরণের সন্ধির তেল, মলম ও ম্যাসেজ ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠেছে। আর এজন্য বিপুল অর্থও ব্যয় করা হচ্ছে। কিন্তু এ ধরণের শারীরিক ব্যথার পেছনে যে ধূমপান বিশেষভাবে দায়ী এটা অনেকেই বুঝতে অক্ষম। কিংবা ধূমপায়ীরা এটা বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকেন। জানা গেছে, নতুন বছরে বেশ কিছু নতুন আইনের মধ্যে ধূমপান প্রতিরোধী আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য।

এর মধ্যে সম্প্রতি ২০টি স্টিকের (শলা) মেনথল সিগারেটের প্যাকেট বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছাড়াও মেনথল (ঠান্ডা), সুগন্ধযুক্ত ও সিগার (তামাক পাতা রোল করে তৈরী) জাতীয় সিগারেট নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। তরুণ সমাজকে মেনথল ও সুগন্ধী সিগারেট পান থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে দেশটি এক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে যখন ধূমপান ও টোবাকো বিরোধী বিভিন্ন আইন পাশ হচ্ছে এবং লোকজন ব্যাপকহারে ধূমপান ছেড়ে দিচ্ছেন, তখন বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মাঝে এই আত্মঘাতী বদ অভ্যাসটি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আর এ ব্যাপারে সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন। এমনকি দেশের ধূমপান বিরোধী আইন বাস্তবায়নেও প্রশাসন তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিস্ময়করভাবে নির্বিকার। ফলে অফিস আদালত হোটেল রেস্তোরাঁসহ সকল পাবলিক প্লেসে চলছে ধূমপানের মহোৎসব। এতে লোকজন এমনকি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে। শীত মৌসুমকে ধূমপানের ঋতু বলা হয়। রাস্তায় বেরোলেই কিংবা যানবাহনে বড়লেই দেখা যাবে হাতে হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। পাবলিক প্লেসসহ যত্রতত্র দাঁড়িয়ে কিংবা বসে চলছে অবাধ ধূমপান। এভাবে ধূমপায়ীরা নিজেদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি অন্যান্য অধূমপায়ী মানুষের ক্ষতি করে চলেছেন।

এই আত্মঘাতী জঘন্য অন্যায় অপকর্ম থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে, নইলে জাতির একটি বিশাল প্রাণবন্ত অংশ অচিরেই পঙ্গু ও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ধূমপানসহ তামাকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে। আর সরকারকে সিগারেট ও তামাক সামগ্রী থেকে রাজস্ব আয়ের লোভ ত্যাগ করে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় সমূহ বিপদ, এটা অনুধাবন করতে হবে এখনই।