পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। প্রধান দুই দলের এই কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠে সারাদেশের রাজনীতি। এতে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা এই কর্মসূচিতে কয়েকটি জেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। রাজবাড়ীতে সংঘর্ষ হয়েছে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে। এসব সংঘর্ষে দুই দলের নেতাকর্মী, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বগুড়ায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ৩৫
বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে।
পুলিশের দাবি, পদযাত্রা থেকে বিএনপির হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, পুলিশের গুলি ও হামলায় ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নওয়াববাড়ি সড়কের রানার প্লাজার সামনে থেকে বিএনপির কার্যালয় পর্যন্ত। বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল এবং হাতে থাকা লাঠি নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তারা পুলিশ পরিদর্শক তারিকুল ইসলামকে মাটিতে ফেলে পেটাতে শুরু করে। অপরদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে।
এছাড়া শহরের থানামোড় হয়ে নবাববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গেও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ কয়েকটি টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
কিশোরগঞ্জে সংঘর্ষে আহত শতাধিক
কিশোরগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দলটি। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটককেল নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি করে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে শহরের রথখলা এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুই সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়া ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ঘণ্টাখানেক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সংঘর্ষের সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবাসায়ীরা। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।
মিরপুরে বিএনপি-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ
পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালে মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা পদযাত্রার উদ্দেশে জড়ো হয়েছিলেন। তখন তাদের সঙ্গে মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পদযাত্রা থেকে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী কলেজ গেটে ভাঙচুর করে এবং সেখানে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে বিএনপির অভিযোগ, শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে বিএনপি নেতাকর্মীদের উল্টো ধাওয়ায় তারা সরে যায়।
খাগড়াছড়িতে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এসময় পৌরসভায় কার্যালয় হামলা, বেশ কয়েকটি মোটরসাইল ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের শাপলা চত্বরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর সংলগ্ন বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হতে শুরু করে বিএনপির অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালনের জন্য অওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নারিকেল বাগান এলাকার দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হন। আওয়ামী লীগের শান্তি উন্নয়ন শোভাযাত্রা করে ভাঙ্গাব্রিজ এলাকায় গেলে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুই দল সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে।
বিএনপির নেতাকর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা চালালে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক নরুল আজমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এরপর শহরে শাপলা চত্বর থেকে ভাঙ্গাব্রিজ এলাকা পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষ চলতে থাকে।
ফেনীতে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে বিএনপির পদযাত্রা শেষে শহরের ইসলামপুর রোডে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ নিরাপত্তার জন্য ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
তবে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল দাবি করেন, পদযাত্রা নিয়ে ইসলামপুর এলাকায় যাওয়ার পর হঠাৎ করে তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় নেতাকর্মীরাও ক্ষেপে ওঠেন। সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
রাজবাড়ীতে বিএনপির নিজেদের সংঘর্ষে আহত ২০
রাজবাড়ীতে পদযাত্রায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা শহরের আজাদী ময়দান ও প্রেসক্লাব চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ীতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হতে থাকেন। খৈয়ম গ্রুপ ও আসালাম-হারুন গ্রুপ এক হয়ে পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। বিএনপির পার্টি অফিসে প্রথম থেকেই আসলাম-হারুন গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। পরে খৈয়ম গ্রুপের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পার্টি অফিসে প্রবেশ করলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খৈয়ম গ্রুপের আফছার আলী সরদার, যুবদল নেতা কাউন্সিলর সম্রাটসহ ৪-৫ জন আহত হন।
ঠিক তার আধা ঘণ্টা পর খৈয়ম গ্রুপের শত শত নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপির পার্টি অফিস দখল করতে আসে। পুনরায় খৈয়ম গ্রুপ ও আসলাম-হারুন গ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয়পক্ষের মধ্যেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আসলাম-হারুন গ্রুপের নেতাকর্মীরা পিছু হটে। খৈয়ম গ্রুপ পার্টি অফিস দখলে নেয়। এতে উভয়পক্ষের ২০ থেকে ৩০ জন আহত হয়। আহতদের নেতাকর্মীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।