ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ,গোমস্তাপুর প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের কৃষি শিক্ষার্থী ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন এ্যাসোসিয়েশনের ভোলাহাট উপজেলার সমন্বয় কারি মিলন মিয়া স্টক করেও জীবন যুদ্ধ বেচে থাকার জন্য কর্মে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে করে সে এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। কেঁচো সার উৎপাদন করে সে বেকারত্ব ঘোচাতে চায়, কিন্তু তার দাবি সে সরকারি ভাবে কৃষি অফিস থেকে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করলে সে তার এলাকার বেকার যুবদের তার প্রজেক্টে কাজে লাগিয়ে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। লউদ্যোক্তা মিলন মিয়া ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নে পোল্লাডাংগা নাজিরপুর গ্রামের আলমাস আলীর পুত্র।
তিনি ২০১৪ সালে তার নিজে উদ্যোগে বাণিজ্যক ভাবে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছে।তিনি জানান আমার এক কাকা আছে তার সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তার কাছে থেকে আমার হাতে খোড়ি। এক বছরের বেশী সময় ধরে ৮ টি সেড তৈরি করে ৫০ হাজার পিছ কেঁচো নিয়ে চারটি দেশী গরুর গোবর দিয়ে কেঁচো/ ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। তাই তিনি বেডের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বর্তমানে তার সেডে ২৪ বেড রয়েছে। বাড়ির গোবর সংকুলান না হওয়ায় সে বাহির থেকে প্রতি মণ গোবর ২০০০ টাকা টলি ক্রয় করেন।
মিলন মিয়া জানায়, আমি নিজে জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফলা ফল পাচ্ছি। এখান থেকে আমি মাসে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা উপার্জন করি।দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমার কাছে গ্রাহকেরাসহ এলাকার অনেক কৃষক আমার কাছে সার কিনতে আসে। তিনি বলেন, এলাকার কৃষকরা যখন আমার নিকট সার কিনতে আসে তখন আমার খুব ভালো লাগে।
কেঁচো /ভার্মি কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বর শক্তি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। ১৫-২৫ দিনের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো যে মল ত্যাগ করে এবং তার শরীরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বের করে দেয়ার পর যে মল ত্যাগ করে তাই কেঁচো / ভার্মি কম্পোস্ট সার।
কেঁচো মাটির নীচে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা বসবাস করে। কেঁচো শরীরে ১০০/১২০ খন্ডে বিভক্ত চোখ নাক কান, ফুসফুস না থাকায় ত্বক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালায়। কেঁচো দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো একটি ডিম থেকে ১০/১৫ টি বাচ্চা দেয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো জীবনচক্রে ১৮০০/২০০০ ডিম দেয়। বাংলাদেশ কেঁচো সার তৈরিতে থাইল্যান্ড, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে আমদানিকৃত কেঁচো ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ এখন প্রচুর পরিমাণে কেঁচো পাওয়া যায়।বর্তমানে আমি প্রতি কেজি কেচো ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি।কেউ যদি নিজের জমিতে কেঁচো সার ব্যবহারের জন্য সার উৎপাদন করতে চায় তাহলে যে সকল উপকরণ লাগবে তাহলো, গোবর, কেঁচো, চালুনি বা ছাকনি, রিং বৃষ্টি রোদ রক্ষায় সেড। যেভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করতে হবে তাহলো প্রতি রিং এ ১৫/২৫ দিনের এ্যামোনিয়াম গ্যাস মুক্ত বাসি পঁচা গোবর ২০/২৫ কেজি।
আড়াই শো গ্রাম কেঁচো (তবে কেঁচো যত বেশী তত দ্রুত সার উৎপাদন হবে)। মাসে প্রতি কেজি গোবর থেকে ৫০০ গ্রাম কেঁচো সার উৎপাদন হবে। সাবধানতা, জৈবসার থেকে কেঁচো আলাদা করার সময় খুব সাবধানে চালুনি দিয়ে চালতে হবে যাতে কেঁচো আঘাত প্রাপ্ত না হয়। তাছাড়া ইদুর, পিপড়া, মুরগী তেলাপোকার প্রিয় খাবার কেঁচো। তাই এদের কবল থেকে কেঁচো রক্ষায় মশারী বা চটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে।
কেঁচো বংশ বৃদ্ধি জন্য চালুনি দিয়ে চালা কম্পোস্টর ভিতরে থাকা ডিম/কোকুন থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ঠান্ডা জায়গায় রেখে বাসি পঁচা গোবরের দলা তৈরি করে ৭/৮ দিন কম্পোস্টে রেখে দিলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে গন্ধে পঁচা গোবরের দলায় প্রবেশ করবে বাচ্চা। উক্ত দলা বাচ্চা সহ পূর্ব থেকে রিং এ রাখা এ্যামনিয়াম মুক্ত পঁচা গোবরের রিং এ রেখে দিলে ৭/৮ সপ্তাহে বাচ্চাগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচোতে পরিণত হবে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক কেঁচো ৫০/৬০ দিন বেঁচে থাকে।
ধান, ভুট্টা, মরিচ, হলুদ, চাষে শেষ চাষের সময় কেজি, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, ঢেড়স, পেঁয়াজ,রসুন কেজি। লেবু, কুল, পেয়ারা, রোপনের সময় ও ফুল আসার পূর্বে বছরে প্রতি গাছে কেজি, আমসহ সকল প্রকার ফসলে এই সার ব্যবহার করলে উৎপাদন বৃদ্ধি ভালো হয়।
ভোলাহাট উপজেলা দলদলী ইউনিয়নের জাব্বার আলী সবজী চাষী কৃষক জানান, এ বছর শসার জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছি। আমি একই জমিতে শীম চাষে আবারও ব্যবহার করছি এতে করে জমিতে আমার রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে।এ ফসলও ভালো হয়েছে আশা করি ফলন ভালো পাবো। আমার দেখাদেখি অনেকেই কেঁচো সার ব্যবহার শুরু করেছে।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুলতান আলী বলেন মিলন মিয়ার প্রজেক্টি নিঃসন্দেহে একটি ভালো প্রজেক্টি। কেঁচো কে গরিবের লাঙ্গল বলা হয়। মাটিতে মাত্রা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমিতে আর বেশী কেঁচো দেখা যায় না। কেঁচো সার ব্যবহারে মাটিতে পুষ্টি উপাদান যুক্ত হয়, বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাটির গঠন উন্নত হয় এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগতমান পুষ্টি গুন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ জৈব সার মাটিতে অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে, সবজি ফসলে মালচিং এর মত কাজ করে।
অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে কেঁচো কম্পোস্ট প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকায় মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। উপকারীতা পাওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা উপজেলায় বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে একটি আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সারে ১.৫৭% নাইট্রোজেন, ২.৬০% পটাশ, ০.৬৬% ম্যাগনেশিয়াম, ১.২৬% ফসফরাস, ০.৭৪% সালফার, ০.০৬% বোরণ রয়েছে। অথাৎ একটি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফলন বৃদ্ধির জন্য যে কয়টি উপদান অত্যাবশ্যক তার সব গুলোই এতে বিদ্যমান। এটা জমিতে ব্যবহারে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।
উৎপাদিত কেঁচো সার পাইকারি বিক্রি ব্যবস্হা করা হবে।এরই অংশ হিসেবে মিলন মিয়া প্রজেক্টে আমরা নিয়মিত কেঁচো সরবরাহ করেছি এবং কৃষকদের নেওয়া জন্য বলেছি।
তিনি বলেন,আরও বলেন তার জন্য আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।