যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বাংলাদেশের একই পরিবারের ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পাবনার দোহারপাড়ায় নিহত আলতাফুন্নেছার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
সোমবার সকালে বৃদ্ধা আলতাফুন্নেছা (৭৭), জামাতা তৌহিদুল ইসলাম (৫৬), মেয়ে আইরিন ইসলাম নীলা (৫৪) এবং তৌহিদ-নীলা দম্পতির তিন সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বজনরা কিছুতেই এ অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
নিহতদের স্বজনরা বাংলাদেশের সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, অন্ততপক্ষে নিহতদের দাফন যেন দেশের মাটিতে করার ব্যবস্থা করা হয়।
স্বজনরা জানান, ঢাকার ছেলে আমেরিকা প্রবাসী তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে পাবনা শহরতলীর দোহারপাড়া গ্রামের মরহুম আবুল মোসলেমের মেয়ে আইরিন ইসলাম নীলার বিয়ে হয়। বিয়ের পর পরই নীলা স্বামীর সঙ্গে পাড়ি জমান স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। তাদের তিন সন্তান তানভীর তাওহীদ, ফারবিন তাওহীদ এবং ফারহান তাওহীদকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলেন।
আড়াই বছর আগে তৌহিদ-নীলা দম্পতি দেশে আসেন এবং তারা আবার ফিরে যাওয়ার সময় তৌহিদের শাশুড়ি অর্থাৎ নীলার মা আলতাফুন্নেছা তাদের সঙ্গে টেক্সাসে যান। ১ এপ্রিল আলতাফুননেছার পাবনায় ফেরার কথা ছিল। কিন্ত করোনার কারণে নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হয়ে পরবর্তীতে ৭ এপ্রিল দেশে আসার দিন ঠিক হয়। কিন্তু তার আগেই নৃশংসভাবে খুনের শিকার হন মেয়ে জামাতা ও নাতি নাতনির সঙ্গে আলতাফুন্নেছাও।
নিহত আলতাফুনেচ্ছার ছেলে ও নীলার ভাই উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ হিরোন জানান, গত শুক্রবার রাতে তার মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তিনিসহ বাড়ির অন্যদের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। মা দেশে আসার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। ১ এপ্রিল তার পাবনায় ফেরারও কথা ছিল। কিন্ত করোনার কারণে নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হয়ে পরবর্তীতে ৭ এপ্রিল দেশে আসার দিন ঠিক হয়।
তিনি বলেন, তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না- এ ধরনের ঘটনা কীভাবে হলো? তিনি বলেন, তার বোনের দুই সন্তান অন্যদের গুলি করে মেরে তারা আত্মহত্যা করেছে বলে মিডিয়ায় যে প্রচারণা হয়েছে- তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা নীলা পাবনায় তাদের পরিবারের সবকিছু দেখভাল করতেন। তার সন্তানদের এ ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে তারা জানতে পারতেন।
আলতাফুন্নেছার ভাই এবং নীলার মামা আব্দুল হান্নান বলেন, এটি আত্মহত্যার পর হত্যাকাণ্ড নয়। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান তিনি।
নিহতের পরিবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করতে। অন্তত তারা শেষবারের মতো স্বজনদের মুখটা দেখতে যেন পারেন।
এদিকে টেক্সাসে বাংলাদেশি এই পরিবারের ছয় সদস্যের লাশ উদ্ধারের পর এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা-এ নিয়ে সেখানেও নানা জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।
নিউইয়র্কে বসবাসকারী কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও পাবনার বাসিন্দা গোপাল সান্যাল বলেন, মর্মান্তিক ঘটনাটি সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
তিনি জানান, নিহতরা দোহারপাড়ার কথাসাহিত্যিক রশিদ হায়দার পরিবারের স্বজন। এ হৃদয়বিদারক ঘটনা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সোমবার সকালে পাবনার দোহারপাড়ার মরহুম আবুল মোসলেমের স্ত্রী বৃদ্ধা আলতাফুন্নেছা (৭৭), জামাতা তৌহিদুল ইসলাম (৫৬), মেয়ে আইরিন ইসলাম নীলা (৫৪) এবং তৌহিদ-নীলা দম্পতির তিন সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত খবরে বলা হয়, সেখানকার পুলিশের ধারণা- তৌহিদ-নীলা দম্পতির দুই কিশোর ছেলে অন্যদের গুলি করে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেন। তারা মানসিক বিষাদগ্রস্ত ছিল বলেও ওই তথ্যে উল্লেখ করা হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।