জেমস আব্দুর রহিম রানা: যশোরের অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার ভবদহ অঞ্চলের সরকারী গাছ ও রাস্তা গিলছে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের ব্যবসা। ভবদহ অঞ্চল জলাবদ্ধ হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময়ে পানি থাকে অত্র অঞ্চলের বিল গুলোতে। ফলে যত্র তত্র গড়ে উঠেছে মৎস্য ঘেরের ব্যবসা। তবে বেশির ভাগ ঘেরের পাড় তৈরি হয়েছে সরকারী রাস্তা ব্যবহার করে।
তাছাড়া ৮ কিলোমিটার এ সড়কটির বিভিন্ন অংশে পিচ ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে । একটু বর্ষা হলে রাস্তার খানা-খন্দো গুলোতে জল দেখা যায়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষসহ যান চলাচল করছে, অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলা ফেরা করছে। হাসপাতালগামী রোগী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তেমন কোথাও রাস্তার পাশে মাটি দিয়ে পাড় তৈরি করতে দেখা যায়নি। সরজমিনে দেখতে পাওয়া যায় নওয়াপাড়া হতে কালিবাড়ী, মশিয়াহাটি থেকে কুলটিয়া পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য ঘের তৈরি হয়েছে। তবে সরকারী রাস্তার সাথে কোথাও পাড় তৈরি করতে দেখা যায়নি।তবে সাম্প্রতিক যা একটু বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া আছে তা কোন কাজে আসছে না। ফলে বেশির ভাগ স্থানে গাছ সহ রাস্তা গিলছে অপরিকল্পিত ঘের ব্যাবসা। ঘেরে সাধারণত বছরের বেশির ভাগ সমায়ে পানি থাকে।
ফলে পানির ঢেউ লাগতে লাগতে বর্তমানে রাস্তার ঢাল ভেঙে গাছ উপড়ে পড়ছে পানিতে ও শত শত গাছ উপড়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কোন কোন স্থানে ইতি মধ্য রাস্তা ভাংতেও শুরু করেছে। ফলে ঝুকির মধ্য আছে শত শত সরকারী গাছ। এমত অবস্থাতে এলাকার সচেতন মহল সরকারী ভাবে ঘেরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
যুগের সাথে তালমিলিয়ে চলছে সারা বিশ্ব। আধুনিকতার ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পোশাক আশাক, খাওয়া দাওয়া বাসাস্থান চিত্ত বিনোদনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
ষাট ও সত্তরের দশকে পাকা রাস্তা ছিল শহর কেন্দ্রিক। শহরেই পাকা পিচের রাস্তা দেখা যেত।গ্রামের রাস্তাগুলো ছিল ছোট এবং সম্পূর্ণ কাদামাটির। কাদামাটির রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে গিয়ে কখনও বা স্কুল ফাঁকি দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় আবার কখনও বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পড়ে গিয়ে স্কুলে না গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে আসতে হতো। কিন্তু বর্তমানেও সেই একই অবস্থা বিরাজ করছে ভবদহ এলাকায় চলাচলের অধিকাংশ রাস্তায়।
এরপর আশি বা নব্বইয়ের দশকে গ্রামের কাঁচারাস্তাগুলো পূর্বের থেকে প্রসস্থ হলো এবং ইটের সোলিং হলো। চলাচলের পথ সুগম হলো। সকলের পায়ে কম বেশি মোগল চপ্পল বা অক্ষয় কোম্পানির পাদুকা উঠল তাও আবার সকলের নয়। এরপর এলো বিদ্যুত,বিদ্যুতের পরে এলো টেলিফোন তারপরে ব্যাংকবীমা। অবিশ্বাস্য পরিবর্তন ও পরিবর্ধন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রেও।
কালের বিবর্তনে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হলো।অাধুনিকতার ছোঁয়া শহর থেকে আজো পাড়া গায়েও ছড়িয়ে পড়ল। কৃষকের এক ফসলের জমিতে তিন ফসল উৎপাদিত হতে লাগলো। একাবিংশ শতাব্দীতে যখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার দ্বার প্রান্তে তখন ডিজিটাল যশোর জেলার শিল্প নগরী অভয়নগরের নওয়াপাড়ার নিকটবর্ত্তী শতাধিক গ্রামের কৃষক ও কৃষিকাজে সংশ্লিষ্ট কয়েক লক্ষাধিক মানুষের জীবনমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত দুর্ভিক্ষ কবলিত সোমালিয়ার জনগনের মতো।তাদের ক্ষেতে না আছে ফসল না আছে বাড়ির আশেপাশে চাষাবাদ করে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শাকসবজি উৎপাদন করার বাস্তবতা। আর তেমনি আছে চলাচলের রাস্তাগুলোর দুরাবস্থা।
এসব সমস্যার মূল যে নাটের গুরু সে অন্য কেউ নয় ষাটের দশকে অভয়নগর মনিরামপুর ডুমুরিয়ার ত্রিভূমিস্থলে নির্মিত ভবদহ নামক স্লুইসগেট। এই মহিমান্বিত স্লুইসগেটটি প্রথমদিকে উন্নয়নের সহায়ক হয়ে কাজ করলে নদীনালা খাল-বিলের পানি চলাচলের বাঁধাবিঘ্ন সৃষ্টির ফলে প্রকৃতি শোষিত নিষ্পেষিত হয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হলো।ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নদনদী খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়ায় বর্ষার সময় বা উজানের পানি নদনদী খালবিল দিয়ে জলকেলি করার পথ হরিয়ে ফেলল। নদীর গভীরতা কমে খাল হলো আর খালের গভীরতা কমে নালা হয়ে গেল।আর তখন পানি বর্ষা বা জোয়ারের সময় কোথাও জায়গা না পেয়ে মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়লো।
পানি যখন বাড়িতে ঢুকলো তখন মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হলো। মানুষ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হলো।এমন কি শহরমুখী যোগযোগের পথটাও নষ্ট হয়ে গেল।