বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ সামলাতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, বিদ্যুৎ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকির অর্থ ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। এক বছরের বাজেট থেকে পূর্ববর্তী অর্থবছরের ভর্তুকির টাকা দিতে হচ্ছে। এরপরও ভর্তুকি পরিশোধে ৯ মাস পিছিয়ে আছে অর্থ বিভাগ।

সর্বশেষ গত বছরের (২০২২) এপ্রিল মাসের ভর্তুকির টাকা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। যা একসঙ্গে দেওয়া হয়নি। তিন কিস্তিতে সেই টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হয় দুই হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয় কিস্তিতে এক হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ কিস্তিতে দেওয়া হয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা। বিদ্যুত খাতের ভর্তুকি কমাতে সরকার শিগগির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে আরও তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ভর্তুকির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু তারপরও এই সীমায় ভর্তুকি বেঁধে রাখা সম্ভব হয়নি। অর্থবছরের ১০ মাসেই (জুলাই-এপিল) বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাকি দুই মাসে ভর্তুকির জন্য আরও ৭ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে বলে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ থেকে গত অর্থবছরের কয়েক মাসের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি তিন মাস অন্তর বিউবোকে ভর্তুকির অর্থ ছাড় করে অর্থ বিভাগ। গত ১১ বছরে শুধু বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। এর বেশির ভাগই বেসরকারি খাতে তৈরি হওয়া ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের বিউবোর পক্ষ থেকে ভর্তুকি খাতে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত চাওয়া হয়েছে।

দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৫২টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস’ (আইইইএফএ) ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেওয়া হয়। তবে এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে শীতেও হচ্ছে লোডশেডিং। যেমন শীতকালে জানুয়ারি মাসে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। কিন্তু সরবরাহ করা যাচ্ছে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। এর ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে কয়লার অভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে না।