আমি ফ্রান্স প্রবাসী ভোজ্য তেলের দাম যদি ৫৫০ টাকা লিটার হয়, তাতে আমার কিছু যায় আসেনা, আমি আশ্চর্যও হবোনা।
কারন? একটু খুলে বলিঃ
★ সয়াবিন তেল উৎপাদনকারি দেশের তালিকার শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে দুটি দেশ হলো রাশিয়া এবং ইউক্রেন। এই খাত থেকে তাদের রপ্তানি আয় যথাক্রমে ৩০১ m$ এবং ২২৪ m$। বর্তমানে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে সয়াবিন তেল রপ্তানি ১০০% বন্ধ।
★ সূর্যমুখী তেল উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম হলো ইউক্রেন এবং দ্বিতীয় হলো রাশিয়া। তাদের বার্ষিক গড় উৎপাদন যথাক্রমে ৪৪ লাখ মে. টন এবং ৪১ লাখ মে. টন এবং ইউক্রেন তার উৎপাদনের ৮৮% রপ্তানি করে আর রাশিয়া রপ্তানি করে প্রায় ৮৫%। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদের রপ্তানি ১০০% বন্ধ।
★ সরিষা বীজ বা সরিষা তেল উৎপাদনে নেপাল বিশ্বে প্রথম হলেও পরের দুটি অবস্থা রাশিয়া ও ইউক্রেনের। এই দুটি দেশ তাদের মোট সরিষা তেল বা বীজ উৎপাদনের প্রায় ৯৩% ই রপ্তানি করে এবং এই রপ্তানিও বর্তমানে ১০০% বন্ধ।
★ পাম তেল বা ভেজিটেবল অয়েল উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম ইন্দোনেশিয়া এবং দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। তাদের বার্ষিক গড় উৎপাদন যথাক্রমে ২৪.৫ কোটি মে.টন এবং ৯.৯ কোটি মে.টন। ইন্দোনেশিয়া তাদের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক রপ্তানি করে এবং মার্চ ২০২২ শেষ সপ্তাহ থেকে তারা পাম অয়েল রপ্তানি ১০০% বন্ধ রেখেছে। মালয়েশিয়াও রপ্তানি বন্ধের পরিকল্পনা করছে।
আচ্ছা, এবার আসি বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। ২০২১ সালে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশের সকল প্রকার তেলবীজ থেকে প্রাপ্ত তেল দিয়ে চাহিদার ১০% ও পূরণ হয়না। মোট চাহিদার ৯০% ই পূরণ করতে হয় আমদানি করে। এখানে নির্মম সত্যটা হলো রাশিয়া- ইউক্রেন- ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে যোগানে বিঘ্ন ঘটেছে, ফলে আপনার কাছে টাকা থাকলেও তেল কিনতে পারবেন না, বেশি দাম দিয়ে হলেও না। এই সংকট দিন দিন বাড়বেই, যতোদিন রাশিয়া-ইউক্রেন ‘ঠিক’ না হয়।
বিশ্বে আরেকটি ভোজ্যতেল উৎপাদনের ‘গুরু’ দেশ হলো আর্জেন্টিনা, তারাও নাকি রপ্তানি সীমিত করবে! আর তাহলে তো বাজারে ভোজ্য তেল দেখা যাবে বলে মনে হয়না।
সুতরাং এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীর উচিত তেল খাওয়া কমিয়ে দেওয়া, স্বাভাবিকের ১০ ভাগের এক ভাগ দিয়ে রান্নার চেষ্টা করা। আর আগামী মৌসুমে বেশি করে তেলবীজ চাষ করা।
আর এসব না বুঝলে, এসব করতে ভালো না লাগলে ৫৫০ টাকা লিটার তেল কিনে খেতে হবে। অথবা এমনও হতে পারে হাজার টাকা দিয়েও তেল কেনার জন্য কোন দোকানে তেল পওয়া ডাবে না, আর তা না হলে তেলের দাম নিয়ে কোন টু টা শব্দ করা যাবেনা, একদম চুপ! এখানে সরকারের করার কিছুই নাই, ব্যবসায়ীদেরও করার কিছু নাই।
আমি নিজে ফ্রান্সে থাকি রমজান থেকে এই প্যারিস শহরের কোথাও সয়াবিন তেল ছিল না – যাদের তেলের প্রয়োজন তারা অধিক দামের অলিভ অয়েল দিয়ে তরকারি রান্না করেছে (এক লিটার বাংলাদেশের টাকায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা) আমার বাসাতে ভাজিপোড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।
এই সব ফালতু সমালোচনা বাদ দিয়ে নিজ নিজ জমিতে সরিষা, সয়াবিন, সূর্য মুখি চাষ করার জন্য মাঠে নেমে পড়ুন। যদি বাংলাদেশের আপামর জনতার চেষ্টায় থাকে ইনশাআল্লাহ আগামীর কোন এক সময় আমরা ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হব।
লেখক ফ্রান্স প্রবাসী
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।