রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ও পূর্ণাঙ্গ সিনেট কার্যকরসহ ১৬ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাকসু আন্দোলন মঞ্চ। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
এসময় রাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাঈমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী মোন্না ও সাধারণ সম্পাদক মীর আলহাজ, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মিলন হোসেন, হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহারাজ, ছাত্রদল নেতা মিঠু, ইশা ছাত্র আন্দোলনের সহ-সভাপতি শাহরিয়ারসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত দাবি পাঠ করেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর। দাবিগুলো হল- অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য রাকসু এবং রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিশ্চিত করে পূর্ণাঙ্গভাবে সিনেট কার্যকর, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় আবাসিক হল নির্মাণ ও হলের সিট সংক্রান্ত বিষয়াবলি অনলাইনে হালনাগাদ করা, বৈধ প্রক্রিয়ায় মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের ব্যবস্থা, আবাসিক হলে সকল ধরনের রাজনৈতিক ব্লক এর নামে দখলদারিত্ব নিষিদ্ধ, প্রতিটি আবাসিক হলের ডাইনিং এবং ক্যান্টিনসমূহে খাবারের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করে খাবারের মান বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সপ্তাহে ৭ দিন এবং সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, যাতায়াতের জন্য রুট বৃদ্ধিসহ পরিবহন দপ্তরে পর্যাপ্তসংখ্যক বাস সংযুক্ত করতে হবে।
তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার আধুনিক করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট বৃদ্ধি এবং উন্নত মানের গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি নির্মাণ, শিক্ষাসনদ ও নম্বরপত্র উত্তোলন এবং সংশোধনে বিড়ম্বনা নিরসনে সকল কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা নিরসণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ছাত্রী হল সমূহের সান্ধ্য আইন বাতিল, বিভাগসমূহে চলমান বাণিজ্যিক সান্ধ্য কোর্স বাতিল করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষার উত্তরপত্রে রোল নম্বর এর পরিবর্তে মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো কোড সিস্টেম চালু করে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চলমান পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে।
এছাড়াও নিহত রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুর ময়নাতদন্তের মাধ্যমে সঠিক রহস্য উদঘাটন করতে হবে, রামেকের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও রাবি শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল ভাংচুরের অভিযোগ ও রাবি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, আমাদের দাবিসমূহ পূরণ করতে আমরা মাসব্যাপী প্রচার প্রচারণা কর্মসূচি চালাবো। প্রথম দুই সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে। পরবর্তী দুই সপ্তাহে নিয়মিত সেমিনার করব। সামনে মাসের শেষের দিকে রাকসুর সাবেক ভিপিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বড় ধরনের ছাত্র সমাবেশ করার চেষ্টা করবো।
এসময় রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি জায়গা যেখানে হিউম্যান রিসোর্স বের হবে। এখান থেকে কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভালো রাজনৈতিক বের হবে। কিন্তু রাজনীতিবিদ তৈরির যে প্রক্রিয়া রাকসু বন্ধ থাকার কারণে সেটি হচ্ছে না। রাকসুর সাবেক নেতারা আজ দেশকে লিড দিচ্ছে। কারণ সেখানে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল। দীর্ঘদিন রাকসু না থাকার কারণে প্রশাসন স্বেচ্ছাচারিতার ভুমিকা পালন করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করার জায়গা পাচ্ছে না আবার পেশ করতে গেলেও প্রশাসন তাদের দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নিহত রাবি শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।