বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৯তম জন্মদিন আজ। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট বাংলাদেশের নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে এক কৃষক পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিও বাজাতেন। তিনিই প্রথম এশীয়, যার আঁকা ছবি পাবলো পিকাসো, সালভাদোর দালি, পল ক্লির মতো বিশ্ববিখ্যাত আঁকিয়েদের ছবির সঙ্গে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে। তিনি একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।

সুলতানের মায়ের নাম মোছাম্মদ মেহেরুননেসা। তার বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী। তবে কৃষিকাজই ছিল তার বাবার মূল পেশা, পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য ঘরামির কাজ করতেন। সুলতান ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান। শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো। তার পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান হলেও বরেণ্য এই শিল্পী এস এম সুলতান নামেই বেশি পরিচিত।

তার জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তার ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে। তার ছবিগুলোতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এসএম সুলতানের হাতেখড়ি শৈশব থেকেই এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরে। তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথের ভাইপো অরুণ রায়। সেই অরুণের কাছেই সুলতানের ছবি আঁকা শুরু। পরবর্তীতে তিনিও সেই কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন। সেখানে সহপাঠী হিসেবে পান জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিনের মতো আরো অনেক গুণী চিত্রশিল্পীদের। পুরুলিয়ার নন্দকানন প্রাইমারি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এস এম সুলতান তৃতীয় বর্ষেই আর্ট স্কুল ছেড়ে বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়ে যান। ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ছবি এঁকে তা বিক্রি করেই জীবনধারণ করতেন।

শিশুশিক্ষা প্রসারের অন্যতম অগ্রদূত এসএম সুলতান ১৯৭৬ সালের আগ পর্যন্ত শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই ছিলেন। এ সময় তার আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে তার ছবির মহিমা নতুন করে ছড়িয়ে পরে। আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রং এবং চটের ক্যানভাস ও কয়লা ব্যবহার করতেন।
তিনি ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি একুশে পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আটির্স্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান এস এম সুলতান।

বরেণ্য এই চিত্রশিল্পী ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।