খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে হাঁটতে গেলে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এবং খান বাহাদুর আহসানুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে চোখে পড়বে কালো রংয়ের এক অদ্ভুত সৌধ। এই মিনার কোনো বিপ্লব বা অর্জনের সাক্ষী নয় বরং এটি এক হারানোর সাক্ষী, বেদনার সৌধ।

২০০৪ সালের ১৩ই মার্চ সুন্দরবনের কটকায় সফরে যেয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন এবং বুয়েটের ২ জনসহ মোট ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত হয়ে শাহাদতবরণ করেন। সেই থেকে প্রতিবছর দিনটিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় দেড় যুগ কিন্তু তবুও দিনটা আসলেই যেন তৈরি হয় শোকের আবহ। পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটি জানান দেয় “ওরা ১১ জন” একেবারে চলে যায়নি। সেদিন যৌবনের মহাসঙ্গীতের সুরে তাল মেলাতে মেলাতে শিক্ষার্থীরা গিয়েছিল প্রকৃতির কাছে। আমাদের গর্বের সুন্দরবনের কাছে। কিন্তু নিষ্ঠুর প্রকৃতি তাদেরকে আর ফিরতে দেয়নি খুবির বুকে, বাবা মায়ের কোলে।

এই সৌধের গল্প খুজতে গিয়ে জানা যায়, সহপাঠীরা সেদিন কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এসেছিলো ক্যাম্পাসে কিন্তু সহপাঠীদেরকে আর পাওয়া যায়নি চায়ের আড্ডায়, আর ক্লাসরুমে।

কেন্দ্রীয় মাঠের পার্শ্ববর্তী এই সৌধটি যেন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কিছু মেধাবীর অসহনীয় লাশ। সুন্দরবনের কটকা সৈকতে সেদিন বসেছিলো মেধাবীদের মেলা সেটা কেমন যেন সহ্য হয়নি রাক্ষুসে সমুদ্রের। ভাটার টানে নিয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু তাজা প্রাণ কিন্তু বন্ধুদের দুঃসাহসিক চেষ্টায় কয়েকজনকে বাঁচানো সম্ভব হলেও “ওরা ১১ জন” আর ফিরতে পারেনি। সেদিন থেকে খুবির ইতিহাসে যোগ হয় একটি কালো অধ্যায়।

১১ জন ভবিষ্যৎ স্থপতিকে হারানোর গ্লানি বুকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে কটকা স্মৃতিসৌধ। যতদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে, যতদিন কটকা স্মৃতিসৌধ থাকবে ততদিন নতুন নতুন অভিযাত্রীদের শুনাবে এই হারানোর গল্প, বেদনার গল্প।

উল্লেখ্য, দুর্ঘটনায় শাহাদতবরণ করা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন ছাত্র হলো আরনাজ রিফাত রূপা, মো. মাহমুদুর রহমান, মাকসুমুল আজিজ মোস্তাজী, আব্দুল্লাহ হেল বাকী, কাজী মুয়ীদ বিন ওয়ালী, মো. কাওসার আহমেদ খান, মুনাদিল রায়হান বিন মাহবুব, মো. আশরাফুজ্জামান, মো. তৌহিদুল এনাম। এছাড়া বুয়েটের দু’জন ছাত্র হচ্ছে সামিউল ও শাকিল।

স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো: শেখ মারুফ হোসেন বলেন, ২০০৪ সালের দুঃসহ স্মৃতিটা এখনো আমাদের কাছে জীবন্ত। অতগুলো তাজা প্রাণ একসাথে ঝরে যাওয়া মানা যায় না। প্রতিবছর ১৩ই মার্চ আসলে যেন আরো বেশি আবেগতাড়িত হয়ে যাই।