মধুপল্লী যেতে হলে দেশের যে কোন প্রান্ত হতে যশোর জেলা শহরে আসতে হবে। এরপর বাসে চড়ে কেশবপুর আসতে হবে।
কেশবপুর উপজেলায় কবি মধুসূদন দত্তের বাড়ি, বাংলা কবিতায় সনেটের প্রবর্তক বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান এই সাগরদাঁড়িতে রয়েছে মধুপল্লী, তাঁর বাড়ি। যশোর বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে কেশবপুরের কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এই মধুপল্লী। প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করলে দেখা মিলবে কবির ভাস্কর্য, আর তার পরেই কবির সেই বাড়ি।

বর্তমানে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর সাহায্যে কবির স্মৃতি নিদর্শন এবং আলোকচিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি জাদুঘর । বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কার করা এই দোতলা বাড়িটিতে রয়েছে মোট ছয়টি কক্ষ । এর মধ্যে উপরে রয়েছে তিনটি এবং নিচে রয়েছে তিনটি কক্ষ । এর নিচ তলায় রয়েছে কবি পরিবারের একটি মন্দির আর মধুসূদন জাদুঘর । মধুসূদন জাদুঘরে আছে কবির ব্যবহার করা খাট, চেয়ার ও আলমারি । এর পাশে রয়েছে একটি ছোট পাঠাগার । এই ভবনের একদম উত্তরদিকে আছে ছাদহীন-দেয়াল ঘেরা একটি অসাধারন নির্মাণশৈলীর একটি কক্ষ । এই কক্ষেরই কোণার দিকে রয়েছে তুলসী গাছ । মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাড়ির প্রবেশ পথের সামনে রয়েছে ১৯৮৪ সালের শিল্পী বিমানেশ চন্দ্র বিশ্বাসের নির্মিত কবি মধুসূদন দত্তের একটি ভাস্কর্য ।

সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া মন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে?

ঘুরে আসুন বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদনের মধুপল্লী
ঘুরে আসুন বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদনের মধুপল্লী

কপোতাক্ষ নদের তীরে ছোট একটা পার্কের ভেতরে একটা কাঠবাদাম গাছ যেখানে কবি ৭ দিন (মতান্তরে ১৪ দিন) তাবু গেঁড়ে বাস করেছিলেন। একদিকে চরম অর্থকষ্ট অপরদিকে মাতৃভূমির টানে ফিরে এসেছিলেন সাগরদাঁড়িতে। কিন্তু খৃষ্টধর্ম গ্রহন করার অপরাধে সমাজপতিরা তাকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়নি। পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছিলেন প্রয়াত বাবা রাজ নারায়ন দত্তের চতুর্থ স্ত্রী। পাছে সব সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যায়। কাঠবাদাম গাছটির গোড়া বাঁধানো, এখানে সেখানে ফাটল ধরে গেছে।

পার্কের উল্টো পার্শ্বে একটা ডাকবাংলো, লাইব্রেরী আছে নীচতলায়। মধুসূদনের প্রকাশিত সব বই, নাটক, উপন্যাস এখানে আছে। এখানে সেখানে অনেক গুলো কবিতা পাথরে খোদাই করে কংক্রিটের স্তম্ভে বাধাই করে রাখা। বাইরে নদীর ঘাটের দিকে চলা রাস্তার পার্শ্বে কবি’র বিশাল এক ভাস্কর্য। অপূর্ব মনোরম পরিবেশ।