যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদ মাধ্যম ঘুম নিয়ে করেছে একটা সমীক্ষা। তারা জানাচ্ছে, ঘুমের পদ্ধতি বদলে সুস্থ থাকা যায়। সেখানে প্রথমেই থাকছে ঘুমের সময় নিয়ে পরামর্শ। সমীক্ষা বলছে, রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়া উচিত।
ঘুমানোর সবচেয়ে সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত সময় রাত ৯-৪ টা। ঘুমের জন্য দায়ী হরমোন মেলাটোনিন রাত ৯ টা থেকে নিঃসরণ হওয়া শুরু হয়। তারপর যত সময় গড়াতে থাকে তত নিঃসণের পরিমাণ কমতে থাকে। রাত ৪ টার পর থেকে মেলাটোনিন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়।
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে আমাদের মস্তিষ্ক ভোর ৪-৬ টা পর্যন্ত ১০০% কাজ করে বা সক্রিয় থাকে।
প্রতিদিন ৬ ঘন্টার কম ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার ৮ ঘন্টার বেশি ঘুমানোও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘন্টা আগে থেকে আমাদের সকল প্রকার স্কিন থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ সকল প্রকার স্কিনের আলো বা রশ্নি ঘুমের জন্য বাধাদানকারী হরমোন মেলানোক্সিন নিঃসরণ করে যার ফলে মেলাটোনিনের নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয়।
আমরা জানি আমাদের চোখে দুই ধরনের কোষ থাকে। একটার নাম রড কোষ অপরটার নাম কোণ কোষ। রড কোষ অন্ধকার অর্থাৎ রাতের বেলা সক্রিয় হয় আর কোণ কোষ আলোতে অর্থাৎ দিনের বেলা সক্রিয় হয়।
তাই যখন রাতের বেলা আপনি স্কিনের আলোতে থাকেন তখন চোখের কোণ কোষে আলোর সংকেত যায় যার ফলে রড কোষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। যার ফলে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধাগ্রস্ত হয়।
আবার আমরা জানি আমাদের ঘুম ৯০-১১০ মিনিটের একটি চক্রে আবর্তিত হয় এবং একে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: Non-Rem(Rapid Eye Movement) ঘুম এবং Rem ঘুম।
Non-Rem ঘুম এই স্তরটি চারটি ধাপে বিভক্ত
ধাপ ১ : এটি ঘুমের একেবারে প্রাথমিক স্তর। এই ধাপে আমরা থাকি আধো ঘুম আধো জাগরণের মাঝে। ঘুম থাকে খুব হালকা এবং সহজেই আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে।
ধাপ ২ : দশ মিনিট প্রথম স্তরে অবস্থানের পর পরবর্তী ১০ মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই দ্বিতীয় ধাপে। এ ধাপে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রকৃতি এবং হৃৎপিণ্ডের গতি স্তিমিত হয়ে আসে। এই ধাপটি ঘুমের সবচেয়ে বৃহত্তম অংশকে নির্দেশ করে।
ধাপ ৩ ও ৪ : তৃতীয় ধাপে মস্তিষ্ক থেকে ডেল্টা তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎপিণ্ডের গতি সবচেয়ে নিচে নেমে আসে। চতুর্থ ধাপে শ্বাস-প্রশ্বাসে থাকে ছান্দিক গতি, পেশীসমূহের কার্যকলাপ থাকে সীমিত। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আমরা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকি। কোনো কারণে এই সময়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমরা সহসাই পরিবেশের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারিনা এবং এই অস্থিরতা বেশ কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়।
Rem ঘুম
এক রাতের ঘুমের ভেতর রিম ঘুমের প্রায় ৩-৫ টি পর্যায় সম্পন্ন হয়। ঘুমিয়ে পড়ার প্রায় ৭০ থেকে ৯০ পর প্রথম পর্যায়টি শুরু হয়। ঘুমের সময় আমরা সচেতন না থাকলেও মস্তিষ্ক ঠিকই সক্রিয় থাকে। কখনও কখনও তার মাত্রা আমাদের জাগ্রত অবস্থার চেয়েও বেশি। এই সময়েই আমারা স্বপ্ন দেখি। চোখের নড়াচড়া, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ সময়ে আমাদের দেহ সাময়িকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বলা হয়ে থাকে যে স্বপ্নে দেখা পরিস্থিতির প্রতি সাড়া প্রদানে বিরত রাখার নিমিত্তেই প্রাকৃতিকভাবেই এমনটা হয়ে থাকে।
Rem এর পর্যায়গুলো শেষ হওয়ার পর ঘুমের পুরো চক্রটি পুনরায় শুরু হয়।
আপনি রাত ২ টা বা তার পর ঘুমালে রেম পর্যায় বাধাপ্রাপ্ত হয় যার ফলে আপনি স্বপ্ন দেখতে পান না বা গভীর ঘুমে (ডিএলএস) যেতে পারেন না । তাই বলা যায়, ঘুমের জন্য উত্তম ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে সর্বোত্তম সময় রাত ৯-৪ টা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।