তাসফি ও শাওন বাসে চেপে যাচ্ছে ভেন্ডাবাড়ী। সেখানে তাসফির মণিলা আপুর বাসা।
রাত সাড়ে এগারোটা। তবুও রাস্তায় যানজট। এই সময়ে সাধারণত যানজট থাকেনা। তবে বিশেষ কোন কারণে হয়তো এমন হতে পারে।
দুজনে পাশাপাশি সীটে বসে অনাগত দিনের চিন্তা করছে। তাসফি ঘুমের ভান করে শাওনের কাঁধে মাথা রাখে-। শাওনের বুক ঢিবঢিব করছে। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ে তার কাঁধে মাথা রেখেছে। জীবনের প্রথম অনুভূতি গুলো ভোলার মতো নয়। এই দিনের স্মৃতি শাওনের অন্তকরণে চিরকাল থেকে যাবে।
– তোমার কি ঘুম পাচ্ছে?
তাসফি গোঙানো স্বরে বলে, ‘সারাদিন ধকল গেছে। তাই চোখ বন্ধ করে আছি।’
– তা ঠিক। কিন্তু বেশীক্ষণ চোখ বন্ধ করে তাকলে তো ঘুম এসে যাবে। পৌছাতে কতক্ষণ লাগবে?
‘অনেক সময় লাগবে। তুমিও চোখ বন্ধ করে রাখো।’
– ঠিক কতক্ষণ লাগতে পারে সেটা বলো।
‘ঘন্টা দুয়েক। যানজট বাড়লে আরও বেশী।’
-ও আচ্ছা।
শাওনের মনে প্রচন্ড ভয়। তাসফি যদি তাকে কখনো ভুল বুঝে চলে যায় ! কোন কারণে যদি হারিয়ে যায়- কিভাবে একা থাকবে সে? যখন তাসফি ছিলো না তখন কারো ওপর নির্ভরতাও ছিলো না। কিন্তু এখন তো জীবনের দোলাচলে তাসফিকে পেয়েছে সে। জীবনের সমস্ত আকাঙ্খা তাসফিকে ঘিরেই। চাইলেই অনেক মেয়ের সাথে মেলামেশা করা যাবে। কিন্তু ভালোবাসা, আবেগ ও দায়িত্ববোধ সব মেয়ের মাঝে থাকেনা। কাউকে জীবেন পাওয়াটা বড় কথা নয়, আজিবন ধরে রাখাটাই তার চেয়ে বড় বিষয়।
কিছুক্ষণ পর শাওন আলতো করে তাসফিকে জড়িয়ে ধরে-। তাসফি তখনও জেগে। হয়তো ইচ্ছে করেই শাওনের স্পর্শ অনুভব করছে। মেয়েদের কামনা প্রবণতা বেশী। অথচ তারা স্বীকার করেনা।
ঘন্টা দুয়েক পর বাস থেমে গেলো।
– তাসফি নেমে পড়ো !
চোখ রগড়াতে রগড়াতে সীট থেকে উঠে বলে, ‘আমরা ভেন্ডাবাড়ীতে এসে গেছি তাহলে।’
– রাত কয়টা বাজে জানো?
‘কয়টা?’
– দেড়টা।
‘তাতে কি হয়েছে?’
– মণিলা আপু কি এতো রাতে জেগে আছে?
‘আপু জেগে আছে।’
– এতো রাতেও জেগে থাকে?
‘আমি বলে রেখেছি।’
– আমার কথা কি বলেছো?
‘হুম। বলছি যে, বেশী রাত হচ্ছে ! তাই শাওনকে নিয়ে যাচ্ছি।’
– তারপর কি বলেছে?
‘বলেছে, শাওন আসলে সমস্যা নেই।’
– তা বুঝলাম। কিন্তু তোমার দুলাভাই, বাড়ীর অন্য লোকজন তারা কি ভাববে? এতো রাতে অপরিচিত এক ছেলে !
‘আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।’
রাস্তার পাশেই মণিলা আপুর বাসা। চার-পাঁচ মিনিট হাঁটতেই দেখতে পেলো, মণিলা আপু ওনার বাসার গেইটে দাঁড়িয়ে-।
মণিলা আপু বলে, ‘এতো রাত হলো কেন?’
তাসফি বলে, ‘রাস্তায় অনেক যানজট তাই।’
মণিলা আপু শাওনের প্রতি তাঁকিয়ে বলে, ‘শাওন- কেমন আছো?’
শাওন ধীর গলায় বলে- জ্বী ! ভালো।
মণিলা আপু বাসার প্রধান গেইট লাগিয়ে দেয়। তারপর সকলে বাসায় ভেতরে প্রবেশ করে।
মণিলা আপু তাসফিকে বলে, ‘শাওনকে গেষ্ট রুমে নিয়ে যাও। বলে ওনার রুমে চলে যায়।’
তাসফি আঙিনায় দাঁড়িয়ে বলে, ‘ঐ যে বাহিরে ওয়াশ রুম। ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি-।’
– এখন আর কিছু খাবো না। গভীর রাতে খেতে নেই।
‘তুমি জ্বীন নাকি ! গভীর রাতে খেলে কি হবে?’
শাওন তাসফির হাতটা চেপে ধরে।
– আমার খুব ভয় করছে তাসফি !
‘কেন?’
– এভাবে এতো রাতে কারো বাসায় আসা বোধহয় ঠিক হয়নি !
‘তুমি বোকা নাকি?’
– এখানে বোকার কী হলো?
‘কাজ করার আগে ভাবতে হয়। এখন ভেবে লাভ নেই। আমি পরে ফ্রেশ হচ্ছি। তুমি ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
– তুমি সাথে চলো।
‘হায়রে বোকা মানুষ ! বলে শাওনের হাত চেপে ধরে ওয়াশ রুমে যায়।
শাওন দাঁড়িয়ে থাকে।
‘কি হলো ফ্রেশ হও।’
শাওন টকটক করে তাসফির আননে চেয়ে রয়।
‘কি হলো দ্রুত নাও।’
শাওন সাহস করে তাসফিকে জড়িয়ে ধরে। তাসফি চোখ বন্ধ করে। শাওনের বক্ষ তাসফির বক্ষের সাথে এক হয়ে মিলিয়ে যায়। তাসফির ঘনঘন নিঃশ্বাস বাড়তে থাকে। শাওনের বুকটা ধুকধুক করছে। বেশ কিছু সময় তারা নিথর দেহের মতো একাকার হয়ে থাকে।
হঠাৎ কার যেন পায়ের আওয়াজ ভেসে আসে।
– তাসফি লাইটটা অফ করে দাও। কেউ বোধহয় ঘুম থেকে উঠেছে-।
‘লাইট অফ করা যাবেনা।’
শাওন থরথর করে কাঁপতে থাকে। ক্রমে কে যেন এগিয়ে আসতে থাকে। উঁচু গলায় বলে, ‘ওয়াশ রুমে কে?’
তাসফি বলে, ‘খালা আমি।’
শাওন দেয়ালের সাথে গা লাগিয়ে দাঁড়ায়।
তাসফি ফিসফিস করে বলে, ‘কোন কথা বলিও না।’
শাওন আস্তে স্বরে বলে- কে উনি?
‘মণিলা আপুর শ্বাসুরী।’
– খালা বললে কেন?
‘উনি আমার খালাই।’
– ও আচ্ছা।
মণিলা আপুর শ্বাসুরী লাইটের আলোতে দুটি ছায়া দেখতে পায়। তাসফিকে বলে, ‘ওয়াশ রুম থেকে বের হলে ডাক দিও। আমি রুমে গেলাম।’
তাসফি ও শাওন দ্রুত ফ্রেশ হয়ে গেষ্ট রুমে চলে যায়।
– তুমি ঘুমাবে কই?
‘খালার সাথে।’
– আজকে এখানে থাকো।
‘না। প্রবলেম আছে।’
– কিসের প্রবলেম? সবাই তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ থাকো অন্তত।
‘আচ্ছা।’
মণিলা আপুর রুম থেকে তাসফি হরেক রকমের খাবার নিয়ে আসে।
শাওনের কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। তাসফির প্রতি অনন্তকাল তাঁকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে তার। তাসফির চোখের প্রেমেও প্রশান্তি আছে। মায়াভরা চোখ দুটো শাওনকে নিরীক্ষণ করে। শাওন তাসফির প্রেমাবেগে উম্নাদনায় নিজেকে সংবরণ করতে পারেনা। দুজনে অনিয়ন্ত্রিত টানে বিভোর থাকে সমস্ত রাত্রি।
লেখকঃ ওমায়ের আহমেদ শাওন।