মানব সমাজে অপরাধ নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু দিনে দিনে অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেমন ধর্ষণ এবং পারিবারিক নির্যাতন এক ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ইদানীং মহামারী আকার ধারণ করেছে। এই মহামারীকে ঘুচাতে ১৯ বছরের তরুণ রোহিত রায় নিয়েছে একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। তৈরি করেছে মোবাইল আ্যাপ ‘ইয়াভ’।

যেখানে ঘরে বসেই নারীরা নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথা প্রতিরোধে রিপোর্ট করতে পারবেন। আজ আমাদের কলমকথা প্রতিনিধি কথা বলবে ‘ইয়াভ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্ভাবক রোহিত রায় এর সাথে।

কলম কথা: কেমন আছেন?
রোহিত : হ্যা, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
কলম কথা: জ্বী, ভালো। আচ্ছা রোহিত, আমরা জানতে পেরেছি আপনি একটি মোবাইল আ্যাপ তৈরি করেছেন !

রোহিত : হ্যা , নারী নির্যাতন মানবতার এক ভয়ংকর নিগ্রহ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রতিটি নারী যাতে ঘরে বসেই নিঃসংকোচে তাদের কথাগুলো তুলে ধরতে পারে সেজন্য আমরা এই আ্যাপটি তৈরি করেছি।

কলমকথা : আপনাদের আ্যাপ অর্থাৎ ‘ইয়াভ’ তৈরির মূল কারণটি কি?

রোহিত : সত্যি বলতে এখন প্রায় এলাকার মেয়েরাই নির্যাতনের শিকার । সেই সাথে বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে। যৌতুকের প্রকোপ তো আছেই। এসকল সমস্যা প্রতিরোধে আমরা এলাকাপর্যায়ে ক্যাম্পেইন করলে তা বড্ড সময়সাপেক্ষ হয়ে যেত এবং তা কষ্টসাধ্য। আর আমি বড্ড অলস। সেজন্য ভাবলাম শর্টকাটে এবং ইউনিকভাবে কিভাবে এসকল সমস্যার সমাধান করা যায়! তখন থেকেই ভাবনার বীজ বপন করি এবং সেই ভাবনা থেকে তৈরি হয় একটি আইডিয়া। আর সেই আইডিয়াটিই আজকের ‘ইয়াভ’।

কলম কথা: বাহ! চমৎকার! সত্যিই বর্তমান সমাজে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন আপনি।

রোহিত : কৃতজ্ঞতা আপনাকে।

কলমকথা: আচ্ছা ‘ইয়াভ’ এর মূল কাজটি সম্পর্কে যদি কিছুটা বলতেন!

রোহিত : এক কথায় যেটা বলতে চাই, নারীদের দুঃখ ঘুচাবে ইয়াভ। ‘ইয়াভ’ বিভিন্ন সেক্টরে একটি সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ গঠনে কাজ করবে। আ্যাপটির মাধ্যমে ভিক্টিম ঘরে বসেই তার প্রতি হওয়া সহিংসতার অভিযোগ করতে পারবে। নারী সহিংসতা প্রতিরোধে আইন সম্পর্কে জানতে পারবে । জরুরী প্রয়োজনে কল করতে পারবে আমাদের হটলাইন নাম্বার ০১ ৬০১ ১০৯ ৩৩৯ নাম্বারে । অধিক ডিপ্রেশনে কল করে নিতে পারবে মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট । এছাড়াও সুষ্ঠু সমাধানে আইনগত সহায়তাও প্রদান করবে ইয়াভ। নারীদের কথাগুলো তুলে ধরতে থাকছে ‘ইয়াভ টকস’ । সারা বিশ্বের নারী সহিংসতার তথ্যগুলো তুলে ধরতে থাকছে আলাদা ফিচারর্স। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে সর্বক্ষণ তৈরি আছে ‘ইয়াভ স্কোয়াডস ‘।

কলমকথা: দারুন! সত্যিই তারুণ্যের একজন উজ্জ্বল উদাহরণ আপনি। এরপর বলুন আপনার অনুভূতি কি?

রোহিত: সত্যি বলতে একটা অন্যরকম ভালো লাগা যে একটি নিরাপদ সমাজ গঠনে আমরা কাজ করতে পারছি, প্রতিটি মা – বোনের মুখে হাসি ফোটাতে পারবো এটা ভেবে সত্যিই অনেক ভালো লাগে।

কলমকথা: সত্যিই চমৎকার উদ্ভাবন। আচ্ছা মোবাইল আ্যাপ ছাড়াও ভিক্টিম অন্য কোন মাধ্যমে তাদের কথাগুলো বলতে পারবে কিনা?

রোহিত: হ্যা, অবশ্যই পারবে। ভিক্টিম আমাদের হটলাইন নাম্বার, আমাদের ওয়েবসাইট www.yavbd.org ভিজিট করে, নিকটস্থ বিট পুলিশিং কার্যালয় এবং সাইবার ক্যাফেতে গিয়েও ভিক্টিম অভিযোগ করতে পারবে।

কলম কথা : অসাধারণ! আচ্ছা ‘ইয়াভ’কি পারবে ভিক্টিমকে সুষ্ঠু সেবা দিতে?

রোহিত: হ্যা, ইয়াভ পারবে। প্রথমত ইয়াভ স্কোয়াডস এর পর্যবেক্ষণে ঘটনার সম্পূর্ণ বর্ননা ইয়াভ রেঞ্জার্স টিমের সত্যতা যাচাইয়ে দক্ষ আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে প্রশাসনের সহযোগিতায় ইয়াভ পারবে ভিক্টিমকে সুষ্ঠু সেবা প্রদান করতে।

কলমকথা : ধন্যবাদ, রোহিত। আমরা আমাদের কথপোকথন এর একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আপনি কি আর কিছু বলতে চান?

রোহিত: আমি শুধুমাত্র একটি কথায় বলতে চাই, নারী সহিংসতা মুক্ত একটি সমাজ,একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য আমাদের এবং আমাদের এই উদ্যোগ আশা করি তা সম্ভব করবে। বাংলাদেশকে একদিন নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথা মুক্ত দেশ হিসেবে আখ্যা দিতে চাই আমরা।

কলমকথা: অনেক অনেক ধন্যবাদ রোহিত আপনার এই চমৎকার উদ্ভবনী উদ্যোগ এর জন্য। কলম কথা’র পক্ষ থেকে আপনার জন্য রইল অজস্র শুভ কামনা ও অভিনন্দন।

রোহিত: অশেষ কৃতজ্ঞতা আপনাকে।

সারাবিশ্বে যখন নারী সহিংসতার শিকার দিন দিন বেড়েই চলেছে তখন তারুণ্যের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। নারী সহিংসতা বন্ধ হোক। প্রতিষ্ঠিত হোক একটি সুষ্ঠু সমাজ,জাতি ও দেশ।