সিলেট বিভাগের নতুন ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন:
সুমনসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি-
বাংলাদেশ জেল সিলেট বিভাগের নতুন কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) হিসেবে মোঃ কামাল হোসেন যোগদান করেছেন। গত ১৫ ই নভেম্বর তিনি এ পদে যোগদানের পরই সিলেট ও সুনামগঞ্জ কারাগার পরিদর্শন করেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনকারী কামাল হোসেনকে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে এই পদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
মোঃ কামাল হোসেন ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সাল ও ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলা সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বহুলালোচিত চট্টগ্রাম কারাগারের প্রাক্তন জেলার সোহেল রানা ও ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের ঘঠনায় যখন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলায় প্রশ্নবিদ্ধ তখনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হিসেবে দায়িত্ব অর্পিত হয় কামাল হোসেনের উপর। তিনি কারাগারের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাদি চিহ্নিত করে শুদ্ধিকরণে কর্মপ্রণালী নির্ধারণ করেন।
বাংলাদেশে কারাগারের মূলমন্ত্র ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ কাজ করে গেলেই কারাগার হবে সংশোধনাগার বললেন ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন।
সিনিয়র জেল সুপার কামাল হিসেবে ২০১৮ সালের ১৯ শে নভেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদানের পর থেকে বন্দী ও স্টাফ কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড গুলো হলো:
★চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দীর্ঘদিনের পানির সমস্যা সমাধানে ওয়াসা কর্তৃক দুইটি ২ ইঞ্চি পানির পাইপ লাইন সংযোগ প্রদান সহ কারাগারের বন্দীদের ব্যারাক সমূহে প্রধান পানি সরবরাহের লাইন সংস্কার করে ৫০,০০০ হাজার গ্যালন বিশিষ্ট একটি পানির রিজার্ভার নির্মাণসহ একটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের মাধ্যমে কারাগারের পানির সমস্যা চিরতরে সমাধান করার প্রচেষ্টা।
★বন্দীদের সাক্ষাত ব্যবস্থা সহজকরণ করে অফিস কল নামে টাকার বিনিময়ে বিশেষ সাক্ষাত বন্ধ করে সকল বন্দীদের একই নিয়মে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা। এছাড়া : বন্দীদের সাক্ষাত কক্ষের ভিতর নেট হতে বাহির নেটের দূরত্ব প্রায় ৩ ফুট হওয়ায় বন্দী ও দর্শনার্থীদের সাথে ভালভাবে কথা বলতে যেমন অসুবিধা হয় তেমনিভাবে একে অপরের চেহারাও দেখতে পারেনা। আইনী পরামর্শ ও পারিবারিক বিষয়ে আইনজীবী এবং পরিবারের সাথে সাক্ষাত করা বন্দীদের আইনগত অধিকার। সাক্ষাতকক্ষের নেটের পর দুরত্ব বেশি হওয়ায় তারা পরস্পরের কথা ভালো ভাবে শুনতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে প্রায়শই বন্দি-দর্শনার্থীরা কারা কর্তৃপক্ষ, সরকারি এবং বে-সরকারি পরিদর্শককে সাক্ষাত কক্ষের বিষয়ে অভিযোগ করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই। বন্দী ও দর্শনার্থীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে একান্ত মানবিক কারণে সাক্ষাতকক্ষটির ভিতর ও বাহির নেটের মধ্যকার দূরত্ব অর্ধেক কমিয়ে আনার কাজ ইতােমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং টাকার বিনিময়ে অফিস কল প্রথাও তিনি বন্ধ করেন।
★বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন। চট্টগ্রাম কারাগারে অবস্থিত লাইব্রেরীতে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কিত বিভিন্ন বই সহ নতুন নতুন বই নিয়ে একটি আধুনিকমানের বঙ্গবন্ধু কর্ণার তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে বন্দীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারছেন।
★ বন্দীদের খাবারের মানােন্নয়ন ও পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিতকরনে নিয়মিত মনিটরিং করা সহ সকল বন্দী যাতে সমপরিমাণ বন্টনকৃত খাওয়ার ন্যায্য বন্টন। এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা সদ্য বের হওয়া বন্দী জুয়েল বলেন, এখন শুধু ডাল দিয়েও ভাত খাওয়া যায় এবং ভাতের চালও এখন অনেক ভালো। একসময় ডাল খুঁজেও পেতাম না পানির মধ্যে।
★”বন্দীর হাত হবে কর্মীর হাত”- এই শ্লোগানটি বাস্তবায়নের লক্ষে বন্দীরা সাজার মেয়াদ শেষে/জামিনে মুক্তির পর যাতে সমাজ ও পরিবারে বােঝা না হয়ে একজন স্বাবলম্বী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে সেই লক্ষ্যে কারাগারের বন্দীদের যুগােপযােগী বিভিন্ন উৎপাদন কার্যক্রমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
যুগোপযোগী, গঠনমূলক ও দুর্দশাগ্রস্ত নিরীহ বন্দীদের ন্যায্যতা আদায়ে কার্যক্রম গুলোকে চালু রাখতে পারলেই দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবহেলা চিরতরে দূরীকরণে সহায়ক হবে বলে জানান, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সদ্য বিদায়ী সিনিয়র জেল সুপার ও বর্তমানে সিলেট বিভাগের নতুন কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) মোঃ কামাল হোসেন।
★করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে এইপর্যন্ত সুরক্ষিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারের ভিতরে বাইরে নেওয়া হয়েছিল নানান উদ্যোগ যার ফলে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হননি কোনো বন্দী। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নেওয়া উদ্যোগগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। আরপি গেট এবং প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে কারারক্ষী ও বন্দীদের তাপমাত্রা নিশ্চিত হয়ে এবং জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশের অনুমতি প্রদান, নতুন আসা বন্দীদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ, একই সঙ্গে রিমান্ড ও চিকিৎসা ফেরত বন্দীদেরও বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা। ছুটি থেকে যোগদানের পর কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যকতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা, তাদের দায়িত্ব পালনের সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, ভাইরাস জিরো দিয়ে প্রতিদিন দুবার করে কারাগারে স্প্রে করা, প্রবেশকারীদের প্রধান ফটকে বসানো জীবাণুনাশক চেম্বারে বাধ্যকতামূলক প্রবেশ করিয়ে জীবাণুমুক্ত করা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দীদের বাধ্যকতামূলক মাস্ক পরা, কারাভ্যন্তরে দায়িত্ব পালনকারীদের বাইরে ঘোরাফেরা সম্পূর্ণ বন্ধ অন্যতম। এপর্যন্ত কোনো বন্দী করোনায় আক্রান্ত হননি। কারারক্ষী ও বন্দীদের সচেতন করতে গ্রহণ করা উদ্যোগ গুলো অব্যহত রাখতে হবে।
ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার নিঃসন্দেহে একটি মানসম্মত অবস্থানে পরিণত, চলমান কাজগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন হউক এবং আমার প্রচেষ্টা ছিলো সুশৃঙ্খল কারাগারে রূপ দিতে সবসময় সর্বোত্তম প্রয়োগের, কারাগার হউক সংশোধনাগা
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।