যশোর- ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা। ১৭৮১ সালে জেলার ঘোষণা দেয়া হয়। তখন এর অধীনে ছিল খুলনা, ফরিদপুর, পাবনা, নদীয়া ও চব্বিশ পরগনা জেলার বেশিরভাগ এলাকা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজস্ব সংগ্রহ ও ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখতে প্রশাসনিক সংস্কার করেন। ১৭৮৬ সালের ৪ এপ্রিল যশোর কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠা প্রস্তাব দেন মি. টিলম্যান হেঙ্কেল। সে বছরই যশোর কালেক্টরেট এর যাত্রা শুরু মি. টিলম্যান যশোর জেলার প্রথম কালেক্টর নিযুক্ত হন। মুড়লিতে অবস্থিত একটি কুঠিবাড়িতে কালেক্টরেট এর যাত্রা শুরু হয়। ১৭৯৩ সালে মুড়লি থেকে কসবায় ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয় সরিয়ে আনা হয়। ১৮০১ সালে বর্তমান স্থানে কালেক্টরেট ভবন গড়ে তোলা হয়। ১৮৮৫ সালে বর্তমান ভবনের ১ তলা নির্মাণ করা হয়। ৩৬০ দরজার এই ভবন তৎকালীন বাংলার দীর্ঘতম ভবন।

আরোও পড়ুন:

অনুপ্রেরণামূলক উক্তি ও বানী

বীরাঙ্গনাদের সীমাহীন আত্মত্যাগ

ভদ্রতা মানবতার ফুল: পূজা চেরি

 

ইতিহাস বলে, ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যশোর-খুলনা-বনগাঁ এবং কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের অংশ বিশেষ যশোর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে যশোর নাটোরের রানী ভবানীর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

২৪১ বছরের এ পুরোনো জেলায় প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এসেছেন চলেও গেছেন। কিন্তু হাতেগোনা কিছু সংখ্যক জেলা প্রশাসক আজও যশোরবাসীর হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছেন। তারা ব্যতিক্রম ও নান্দনিক উদ্যোগের মাধ্যমে যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে নিয়েছেন। যশোরের বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানও তেমনই একজন। যিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর রুটিন কাজের পাশাপাশি যশোরকে অনন্য উচ্চতায় নিতে নান্দনিক কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুনরূপে যশোর কালেক্টরেট ভবন সাজানো হয়েছে। বর্ণিল আর্কিটেকচারাল আলোকসজ্জায় রাতে মোহনীয় রূপ ধারণ করে যশোরের ঐতিহ্যের প্রতীক এ ভবনটি। ভবন চত্বরে পার্ক ফিরে পেয়েছে প্রাণ। সবুজের মাঝে ফুলে ফুলে সুশোভিত করা হয়েছে।

কালেক্টরেট ভবনের দ্বিতীয়তলায় দাঁড়িয়ে সামনে তাকালে চোখে পড়বে অপরূপ কালেক্টরেট পুকুরটি। সংস্কার করায় বদলে গেছে চেহারা। পুকুরপাড় বাঁধাই ও বসার ব্যবস্থা করায় শহরবাসীর পছন্দের জায়গায় পরিণত হয়েছে এটি। পুকুরে বাহারি পদ্মফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। ছাড়া হয়েছে রঙিন মাছ। কালেক্টরেট ভবনের বর্ণিল সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। কালেক্টরেট পার্ক ও পুকুর নগরবাসীর পছন্দের জায়গায় পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘সনেট’ ও ‘অমিত্রাক্ষর’ নামে কালেক্টরেট ভবনের দুটি মিলনায়তনের নামকরণ করেছেন। তিনি নান্দনিক কাজের মধ্য দিয়ে নান্দনিক জেলা প্রশাসক হিসেবে মানুষের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

বর্তমান জেলা প্রশাসক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কালেক্টরেট ভবনে সন্নিবেশিত করেছেন। ভবনটিও সংস্কার ও আলোকসজ্জা করেছেন। বি. সরকার ঘূর্ণায়মান মঞ্চটি সংস্কার করে চালু করেছেন।

যশোরের কালেক্টরেট এ জেলার একটি প্রতীক। যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে।