শিক্ষার উৎপত্তি সেই শব্দ থেকে যা কুরআনের প্রথম বর্ণনাতীত বাণী সমূহের অংশবিশেষ।পবিত্র কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াতে আল্লাহ সুবানাহু ওতায়ালা বলেছেন,

ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ-
خَلَقَ ٱلْإِنسَٰنَ مِنْ عَلَقٍ-
ٱقْرَأْ وَرَبُّكَ ٱلْأَكْرَمُ-
ٱلَّذِى عَلَّمَ بِٱلْقَلَمِ-
عَلَّمَ ٱلْإِنسَٰنَ مَا لَمْ يَعْلَمْ-

১.পড়ুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।
২.সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
৩.পাঠ করুন,আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু,
৪.যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,
৫.শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।

মহান প্রভু প্রথমেই শিক্ষার ভূমিকা বুঝাতে আগে শেখার কথা উল্লেখ করেছেন এবং শেখার পর শিক্ষাদানের মাধ্যমে সকলের নিকট তা পৌছে দেয়ার কথাও বলেছেন।

আবার আবু দ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,‘‘কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত হবে সেই আলিম, যার ইলমের দ্বারা কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না।’’ সুতরাং বোঝা যাচ্ছে শিক্ষকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।আবার একজন শিক্ষকের কার্য শুধু শ্রেণিতে শিক্ষা দান করাতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং শিক্ষকদের উচিত সকল বিষয়ে ছাত্রদের নির্দেশনা প্রদান করা,ছাত্রদের-ছাত্রীদের অনুভূতি বোঝা,বিদ্যালয়ের বাহিরেও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলা,আমল আখলাক সুন্দরের মাধ্যমে পারিবারিক,সামাজিক,রাষ্ট্রীয় পরিবেশ সুন্দর ভাবে তৈরি করা।

কারণ কর্মে ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তথ্য প্রদান বা জ্ঞানদান করাকেই মূলত পাঠদান বলে। 

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ ওহীযোগে আমাকে জানিয়েছেন-‘‘যে ব্যক্তি বিদ্যাশিক্ষার জন্য কোনো পথ ধরে,আমি তার জন্য বেহেশতের পথ সুগম করে দেই।’’

সুতরাং একজন শিক্ষকের কর্ম এবং ব্যবহারের প্রভাব তাঁর ছাত্রদের উপর অবশই পরে থাকে,তাই ইতিবাচক মনোভাব কিংবা নেতিবাচক পরিবর্তন ছাত্রদের মাঝে ফুটিয়ে তোলার অগ্রাধিকার একমাত্র শিক্ষকের হাতেই।সেই দৃষ্টিতে দেখতে গেলে শিক্ষকরাই দেশের কারিগর কিংবা আগামী ভবিষ্যৎ এর প্রধান নির্মাতা।

তাই একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হল-

১.একজন শিক্ষকের প্রধান শিষ্টাচার হলো তাওয়াক্কুল তথা একমাত্র রব্বে কারীমের উপর ভরসা করা।
২.সময়ের সঠিক পালন তথা ব্যবহার করা।
৩.রাগ কিংবা উগ্রতা পরিহার করে নম্র ভাষা ও শিষ্টাচারের প্রয়োগ করা।
৪.সব বিষয়ের সম্পূর্ণ জ্ঞান না থাকলে সেসব বিষয়ে অন্তত পক্ষে প্রাথমিক ধারণা রাখা ও জেনে বুঝে জ্ঞান লাভের পর ছাত্রদের তা শিক্ষা দেয়া।
৫.সহযোগিতা পরায়ন ভাবনা থাকা।
বড় সংগঠন চালানোর জন্য অনেক লোকের সহযোগিতা থাকা যেমন জরুরি ঠিক একই ভাবে বিদ্যালয় চলানোর জন্য প্রতিটি শিক্ষকের মধ্যে সহযোগিতার অনুভূতি থাকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কেবল একজ শিক্ষকের ওপরে কখনো একটি বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সামলানো সম্ভব নয় বরং সকলে মিলে কাজ করলে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ,রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব কিছুই গড়ে তুলা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
৬.নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বেশি থাকাঃযে কোনো শিক্ষকের সবচেয়ে মহত্বপূর্ণ ভূমিকা সকল বিষয় ঠান্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারা ও প্রত্যেক বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা,মতামতের ভিত্তিতে কার্য সমাদা করা।আবার
নিয়ন্ত্রণ শব্দটি শুনতে অনেক সহজ লাগলেও তা বাস্তবে করা অনেক কঠিন কাজ যা সকলের দ্বারা সম্ভব হয় না।সুতরাং একজন শিক্ষকের মধ্যে উক্ত গুন অনুপস্থিত হলে সে শিক্ষাদানের অযোগ্য।
৭.নিরিক্ষন করাঃএকজন আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্য শুধু শিক্ষাদান করাতেই সীমিত থাকে না,বরং তাঁর সাথে সাথে বিদ্যালয় এবং ছাত্র ছাত্রীদের নিরীক্ষণের দায়িত্বেও সজাগ থাকা উচিত।কোন ছাত্র কি করছে কোথায় যাচ্ছে,কাদের সাথে ওঠাবসা করছে এমনকি তার আমল আখলাক সুন্দর হচ্ছে কিনা,চরিত্রে মাধুর্যতা আসছে কিনা ইত্যাদি বিষয়াবলী নিরিক্ষণ করাও একজন আর্দশ শিক্ষকের দ্বায়িত্ব।
৮.সকল ছাত্র-ছাত্রী কিংবা অভিভাবকদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার করা,তাদের সমস্যা গুলোর সুন্দর সমাধা বের করে দেয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতির সৃষ্ট চাপ সামলে নেয়ার যোগ্যতা থাকা।
৯.অহংকার কিংবা প্রতিহিংসা ব্যাপারগুলো থেকে মুক্ত হওয়া।
১০.রাজনৈতিক প্রতিপন্নতার বিষ-বাণী ছড়াতে অভ্যস্ত না হওয়া কিংবা বিরত থাকা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«وَإِنَّ العَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الحِيتَانُ فِي المَاءِ، وَفَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ، كَفَضْلِ القَمَرِ عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ، إِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ»

‘‘জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা, এমনকি পানির নিচের মাছ।অজ্ঞ ইবাদত গুজারের তুলনায় জ্ঞানী ব্যক্তি ঠিক সেরকম মর্যাদাবান,যেমন পূর্ণিমার রাতের চাঁদ তারকারাজির উপর দীপ্তিমান।আর জ্ঞানীগণ নবীদের উত্তরাধিকারী।’’

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে একজন শিক্ষকের দ্বায়িত্ব ভার কতো গুরুতর।কিন্তু এর বিপরীত মনোভাবের পরিচয় দান কারীর জন্য একটি হাদীসই যথেষ্ট।

তা হলো,কা‘ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ طَلَبَ العِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ العُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللَّهُ النَّارَ»

‘‘যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্যে জ্ঞান অন্বেষণ করে যে,আলিমদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে অথবা বোকা ও মূর্খ লোকদের সাথে বিতর্ক করবে এবং লোকদের দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট করবে,আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’’

তাই সকলের জন্য হুশিয়ার হওয়া আবশ্যক।আর এ জ্ঞানের বিস্তার করতে স্বয়ং নবীগণও আল্লাহর কাছে দু’আ করেছেন।